বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

‘বেশি টাকায় কম সময়ে’ এনআইডি সংশোধন

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য সংশোধনসহ অসৎ উদ্দেশ্যে বয়স কমানো-বাড়ানোর ‘সার্ভিস সেন্টার’ খুলে বসেছেন দোকানিরা। রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন (ইসি) এলাকায় এ রকম কিছু ছোট ছোট দোকান রয়েছে। এনআইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে সেখানে প্রতিদিনই ভিড় করেন ভুক্তভোগীরা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি জালিয়াত চক্র। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এই চক্রে নির্বাচন কমিশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় দোকানি ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা জড়িত।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, চক্রটি এনআইডির যে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি সমাধান করে। তারা এ কাজে সময় নেয় কম, টাকা নেয় বেশি। এখন পর্যন্ত এই চক্রের ২৩ জনকে শনাক্ত করেছে সিআইডি। এর মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাতে আরও অনেকের নাম উঠে এসেছে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর এনআইডি কার্ড জালিয়াতির অভিযোগে পল্টন থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। সেই মামলায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এ মামলায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন– আগারগাঁও নির্বাচন অফিসের সামনে মনিহার স্টুডিওর মালিক তাজুল ইসলাম, তাঁর দোকানের কর্মচারী জাকির আহম্মেদ, ভূঁইয়া ট্রেডার্সের শাকিল হোসেন ও মো. আহাদ, আজাদ এন্টাপ্রাইজের মো. হাসান ও মো. মানিক, আনসার সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান, দালাল জাহাঙ্গীর কবির। এরই মধ্যে তাজুল, হাসান, মুস্তাফিজ ও জাহাঙ্গীর আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জালিয়াত চক্রটি ভুক্তভোগীদের চেয়ারম্যানের নাগরিক সনদপত্র ও জন্মসনদসহ বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করত। তারা ২০ হাজার থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিত। এ ছাড়া বয়স কমানো-বাড়ানোর জন্য ১৫-২০ হাজার টাকা নিত।

চক্রটি দুটি ধাপে এনআইডি কার্ডে জালিয়াতি করে। প্রথমত, দোকানিরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে। দ্বিতীয় ধাপে, নির্বাচন অফিসের দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের টাকা দিয়ে সংশোধন করে আনে। জড়িত এক আনসার সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা যায়, চক্রটি অবৈধভাবে এনআইডি কার্ডে জন্ম সাল বাড়ানো-কমানোসহ অন্যান্য ভুল সংশোধনের কাজ করে আসছিল। এ ছাড়া অসৎ উদ্দেশ্যে কিছু আবেদনকারী তাদের প্রকৃত বয়স কমিয়ে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং এনআইডি কার্ড করিয়ে নিতেন।

গ্রেপ্তার আসামিরা জবানবন্দিতে জানায়, জালিয়াতিতে ইসি অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষভাবে সহায়তায় করেন। এর মাধ্যমে তারা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

চক্রের সদস্যরা আবেদনকারী সংগ্রহ থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে আর্থিক চুক্তি করতেন। আরেক গ্রুপ অনলাইনে আবেদন করে ইসি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সনদ এবং জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে থাকে। এনআইডি সংশোধনের জন্য সব ভুয়া কাগজপত্র দেওয়া হতো।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এই চক্রে জড়িত অঙ্গীভূত আনসার সদস্য মুস্তাফিজকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়। পরে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন (সিপিসি) বিভাগের পরিদর্শক লালবুর রহমান সমকালকে বলেন, এনআইডি জালিয়াত চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যদের কাছ থেকে তাদের অনেক সহযোগীর নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *