কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাতারবাড়ি। উপকূলীয় এই এলাকায় এক সময় পেশা মানেই ছিল সাগরের নোনা জল জমিয়ে লবণ চাষ। একই সঙ্গে জেলে আর চিংড়ি চাষীদের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না।
সময়ের পরিক্রমায় সেই লবণভূমিতেই এখন স্থাপন করা হয়েছে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর পাশেই দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে রয়েছে স্বপ্নের হাতছানি।
বলা হচ্ছে, অত্যাধুনিক এসব অবকাঠানো নিয়েই টেকসই উন্নয়নের নজির গড়বে বাংলাদেশ।
জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে নির্মিত মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম বড় প্রকল্প। এই স্থাপনা ঘিরেই বাতারবাড়িকে বিদ্যুৎ হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য সরকারের।
মাতারবাড়ি ও ঢালঘাটা ইউনিয়নের প্রায় ১ হাজার ৪০০ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর দায়িত্বে রয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। এরই মধ্যে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই উৎপাদন শুরু করেছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট। দ্বিতীয়টির কাজও চলছে জোরেশোরেই, যা উৎপাদনে যাবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে।
কয়লাভিত্তিক মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হয়েছে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে। আরো আছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্টিম টারবাইন, সার্কুলেটিং কুলিং ওয়াটার স্টেশন এবং ২৭৫ মিটার চিমনি ও পানি শোধন ক্ষমতা। ফলে এখানে কয়লা লাগবে কম এবং কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হবে নামমাত্র।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আসছে মূলত অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। এরই মধ্যে আমদানি হয়েছে বেশ কয়েকটি চালান। এসব কয়লা আমদানির জন্য নদীতে তৈরি করা হয়েছে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ চ্যানেল। কয়লা ওঠা-নামা ও সংরক্ষণের জন্য আছে আলাদা জেটি ও কোল ইয়ার্ড। ৫৯ ফুট গভীর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৮০ হাজার টন ক্ষমতার জাহাজ সরাসরি ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ। এটি শেষ হলে এখানে সাড়ে ১৮ মিটার গভীরতার পণ্যবাহী মাদার ভেসেল সরাসরি ভিড়তে পারবে। ফলে এখানে তৈরি হবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের নতুন কেন্দ্র, বছরে সাশ্রয় হবে ৫ বিলিয়ন ডলার।
‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ বা ‘বিগ বি’র কল্যাণে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে মাতারবাড়ি সরকারের সবচেয়ে বড় উদ্যোগ। সমীক্ষা বলছে, এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শতভাগ চালু হলে সারাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। তেল, গ্যাস অনুসন্ধান ও আহরণে মাতারবাড়ি হবে বাংলাদেশের বড় নির্ভরতা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনা সুদূরপ্রসারী। নতুন ৩৪টি অবকাঠামো নির্মাণ হলে মাতারবাড়ির গুরুত্ব বাড়বে বহুগুণ, পর্যটন নগরী হিসেবে আলাদা মনোযোগ পাবে কক্সবাজার। আর এই অভূতপূর্ব অগ্রযাত্রার সুফল পাবে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এরই মধ্যে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মাতারবাড়ি গভীর সমদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চ্যানেলটির প্রস্থ ১০০ মিটার থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ মিটার করা হয়েছে।
Related