রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
চকরিয়ায় বিশেষ অভিযানে ইউপি সদস্যসহ গ্রেফতার ৯ মানহানিকর সংবাদ প্রচার করায় জেলা ছাত্র দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাহিমুর রহমানের বিবৃতি পোকার আক্রমণে বিবর্ণ মহেশখালীর প্যারাবন মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়া সড়কের উপর অবৈধ ভাবে তৈরি করা হচ্ছে ব্যক্তিগত কাঠের রাস্তা শেখ হাসিনার পতনের ঘটনায় প্রশাসনিক নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে খাস জমি দখল করে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন। যেন দেখার কেউ নাই হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক সহ কটেজ জোনে অভিযান পরিচালনা করায়, কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবি পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার সাবেক মুখ্য সচিব নাসের ও সচিব মেজবাহ গ্রেফতার মহেশখালীতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল বেলাভূমি ও হোটেল ক্লাসিক এখন পতিতা, মরণ নেশা ইয়াবা ও মাদকের স্বর্গরাজ্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি পুনর্গঠন

মাতামুহুরী নদীর তীর রক্ষা কাজে অনিয়ম

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভাঙন রোধে মাতামুহুরী নদীর ডান তীর রক্ষা কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজের মান নিয়ে উপকারভোগী দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ঠিকাদার যেনতেনভাবে প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্প যথাযথভাবে তদারকি হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, চকরিয়া উপজেলার লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে দুই কিলোমিটার এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীর ভাঙন দেখা দেয়। এতে কয়েক বছরে এখানকার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, বাজার ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে দুই ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের স্থানীয় লোকজন মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৩ জুন ২ দশমিক ২০ কিলোমিটার তীর প্রতিরক্ষা কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

চারটি প্যাকেজে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু করে।
এর মধ্যে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ছোয়ালিয়া পাড়ার ৫০০ মিটার কাজের ঠিকাদার ফরিদুল আলমের চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠান আরও দুইজন ঠিকাদারের পাওয়া কাজ কিনে নিয়ে বাস্তবায়ন করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রভাবশালী ব্যক্তি। সংসদ সদস্য জাফর আলমের আত্মীয় পরিচয়ে ফরিদুল আলম কাউকে পাত্তা দেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজি মামলা দেওয়া ও কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী অন্য জায়গা থেকে বালি এনে কাজ বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর তীরে শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগ ভর্তি করছে। নদীর পলিযুক্ত বালুও জিও ব্যাগ ভর্তি করা হচ্ছে। এতে বর্ষায় ঢলের পানিতে জিও ব্যাগের পলি মাটি গলে খালি হয়ে স্রোতে ভেসে যাবে।

সরজমিনে দেখা গেছে, কাজের নকশা অনুযায়ী জিও ব্যাগ বসানোর আগে নদীর তীরে স্লোপ করে চার ইঞ্চি বালি ফিলিংয়ের উপর জিও টেক্সটাইল বিছিয়ে চার ইঞ্চি ইটের খোয়া ফেলে কম্প্যাকশন ধরা আছে। কিন্তু ঠিকাদার কোনো ধরনের বালি ফিলিং করেনি। জিও টেক্সটাইল ও ইটের খোয়াও খুবই নিম্নমানের। তারপরও কোথাও চার ইঞ্চি খোয়া ফেলানো হয়নি।

জিও ব্যাগে এক বস্তা সিমেন্টে ১০ টুকরি বালি দেওয়ার কথা থাকলেও ১৮ থেকে ২০ টুকরি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাসিন্দা কবির আহমদ।

তিনি বলেন, ভিটে-জমি হারিয়ে এলাকার লোকজন সর্বস্বান্ত। আশা করেছিলাম টেকসই কাজ হবে। কিন্তু ঠিকাদারের কাজ দেখে আমরা হতাশ।

নদীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিয়মের সুযোগ পেয়েছে।

কৈয়ারবিল ইউনিয়নের (ইউপি) সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ফরিদুল আলম স্থানীয় ব্যক্তি ও প্রভাবশালী। এ কারণে পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকায় কাজের অনিয়ম থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদী থেকে বালু তুলে জিও ব্যাগ ভর্তি করা হয়েছে। খুবই নিম্নমানের কংক্রিট ও সিমেন্ট কম দিয়ে জিও ব্যাগ ভর্তি করেই কাজ করেছেন।

কাজের তদারকি না করার বিষয় ও অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে পাউবোর বান্দরবান পওর বিভাগের প্রকল্পের শাখা কর্মকর্তা (এসও) নিকু চাকমা নিজেও এ প্রকল্প নিয়ে বিরক্ত বলে জানান। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। সাইটে দুই-তিনবার যাওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে এড়িয়ে গিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এ নিয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারব না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চকরিয়া ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির স্বত্বাধিকারী ফরিদুল আলম দুর্নীতি-অনিয়ম অকপটে স্বীকার করে বলেন, মিলেমিশে খাওয়ার জন্যই কাজ করছি। এ নিয়ে লেখার কী আছে? লিখে কিছুই হবে না।

যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, কাজের মান ভালো আছে। তদারকিও ঠিকভাবে হচ্ছে। নকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। সুত্র: বাংলা নিউজ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *