সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৪:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু মহেশখালীতে প্রয়াত সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খাঁনের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ১ লক্ষ ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ১ !! উখিয়ায় দিনদুপুরে চাঞ্চল্যকর চুরি: সহকারী শিক্ষকের ঘর থেকে ৪.৫ লক্ষ টাকা ও ৩৩ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার লুট টেকনাফে বাকপ্রতিবন্ধী আলমগীরকে গুলি করে হত্যা, মূলহোতা নুরুল আলম ডাকাত গ্রেফতার আলীকদম সেনা জোনের অভিযানে জেএসএস (মূল)-এর ৯ সন্ত্রাসী আটক, অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার পাহাড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে প্রাণ হারালো তরুণ মেহরাব: দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজন কঠোর পর্যটন নীতিমালা উখিয়ায় পুলিশের ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান : আওয়ামী লীগের ১০ নেতা-কর্মী গ্রেফতার চকরিয়ায় আ. লীগের ঝটিকা মিছিল, সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার ৫৫ রোহিঙ্গাদের জন্য সুইডেনের ২.১ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা

বছরজুড়ে যেসব পণ্য ক্রেতাদের ভুগিয়েছে বেশি

পণ্যমূল্যের রেকর্ড দাম বাড়ার মধ্য দিয়ে বিদায় নিচ্ছে ২০২৩ সাল। বিশেষ করে মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের দর বাড়াতে অনেকেই বাজারের ফর্দে কাটছাঁট করেছেন। ভোগের পরিমাণ কমিয়েছেন কেউ কেউ। দিশেহারা মানুষ ছুটেছেন টিসিবি ও ওএমএসের ভর্তুকিমূল্যের পণ্যের ট্রাকের পেছনে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সঞ্চয় ভেঙে খেয়ে বেঁচেছেন অনেকে।

ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা দরও বেঁধে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু তা ছিল মুখে মুখে। বেঁধে দেওয়া দর কোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই বাস্তবায়ন হয়নি। বিদায়ী  বছর সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেয় কাঁচামরিচ। জুলাই মাসের  শুরুতে ঢাকায় সর্বোচ্চ ৬৫০ টাকায় কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে দাম আরও অস্বাভাবিক ছিল। দেশের কোনো কোনো জেলায় রেকর্ড ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচের কেজি। শেষ পর্যন্ত সরকারের নীতি সহায়তায় আমদানি হতে শুরু করলে দাম কমতে থাকে।

দীর্ঘ সময় ধরে আলুর বাজারে রয়েছে অস্থিরতা। বছরের শেষ চার মাস ক্রেতাকে বেশ ভুগিয়েছে খাদ্যপণ্যটি। ২৫ টাকা থেকে কয়েক দফায় বেড়ে ৭০ টাকায় উঠেছে। কোথাও আবার ৮০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ায় কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমতি দেয়। ভারত থেকে কয়েক হাজার টন আমদানিও হয়। বাড়ছে নতুন আলুর সরবরাহ। তবু নাগাল টানা যায়নি। এখনও ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। এটি গত বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি দাম।
দেশে এর আগে চিনিরও এত বেশি দর দেখেনি ক্রেতা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে দর বৃদ্ধি ও দেশে ডলারের দর বাড়ার কারণ দেখিয়ে ঘন ঘন চিনির দর বাড়ানো হয়েছে। ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দিয়ে শুরু হলেও বছরের শেষ প্রান্তে দর ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। কখনও কখনও বাজার থেকে চিনি হাওয়া হয়ে যাওয়ার চিত্রও দেখেছে ভোক্তারা।

ব্রয়লার মুরগিও দর বৃদ্ধির দৌড়ে ছিল। মার্চে ২৮০ টাকা ছিল ব্রয়লারের কেজি। এর আগে এত বেশি দাম দেখেনি ক্রেতারা। ব্রয়লারের পর বাড়ে ডিমের দাম। আগস্টে ফার্মের ডিমের ডজন ওঠে ১৭০ টাকা। তবে এক হালি কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকায়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ডিম আমদানির অনুমতি দিতে হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ৬২ হাজার পিসের বেশি ডিম আমদানি হয়নি।

কিছু স্বস্তিদায়ক খবরও ছিল। বছরের শেষ দিকে গরুর মাংসের দাম বেশ কমে। কেজি নেমেছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তবে  শেষ এক-দেড় মাস বাদে বাকি সময়টা বেশ চড়া ছিল দাম। বছরজুড়ে কেজি ছিল ৭৫০ টাকার আশপাশে। কোথাও  ৮০০ টাকা দরেও বিক্রি হয়েছে। মাছের বাজারও ছিল নাগালের বাইরে। মাছ-মাংসের উচ্চমূল্যে দিশেহারা ক্রেতারা যখন সবজির প্রতি ঝুঁকছেন, তখন সবজিও ‘কাঁচকলা’ দেখানো শুরু করে ভোক্তাকে। মৌসুমের বেশির ভাগ সময় সবজির দাম ছিল চড়া। বেশির ভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কয়েকটির দর শতক ছাড়ায়। কোনোটি দেড়শর ঘরও অতিক্রম করে।

আদার ঝাঁজ ছিল বেশ যন্ত্রণাদায়ক। বছরের মাঝামাঝি সময়ে অস্থির হয়ে ওঠে আদার বাজার। এক পর্যায়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে আদা খেতে হয়েছে মানুষকে। দর কমলেও এখনও ৩০০ টাকার ঘরে রয়েছে । মসলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বাড়ে জিরার। এক বছরে তিন গুণের বেশি দর বেড়ে জিরার কেজি বিক্রি হয়েছে ১২শ টাকায়। এক বছর আগে আদার দর ১৫০ থেকে ২০০ এবং জিরার দর ছিল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। আদা, জিরা ছাড়াও এ বছর এমন কোনো মসলা নেই যার দাম বাড়েনি। কোনোটির দাম ২০০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অথিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা দফায় দফায় তদারকিও করেছে। তাতে খুব বেশি সুফল পাননি ভোক্তারা। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছা মতোই দাম বাড়িয়েছেন। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনন্দিন পণ্যের দামের তালিকা দেখলেই এর বাস্তবতা অনুভব করা যায়। সংস্থাটি ৫২টি পণ্যের (একই জাতীয় কিছু পণ্যে প্রকারভেদ আছে) দৈনন্দিন দাম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গেল এক বছর ৩৫টি পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাজারে একের পর এক নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বড় বিপদে পড়েন স্বল্প আয়ের মানুষ। দামের চোটে অনেকেই বাজারের ফর্দে কাটছাঁট করেছেন। কমিয়েছেন ভোগের পরিমাণ। দিশেহারা হয়ে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্তরাও ছুটেছেন টিসিবি ও ওএমএসের ট্রাকের পেছনে। ফলে দিনকে দিন দীর্ঘ হতে থাকে ভর্তুকিমূল্যে পণ্য কিনতে আসা মানুষের সারি। পণ্য না পেয়ে কোথাও কোথাও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। বিক্রিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে টিসিবি ট্রাকসেল বাতিল করে পরিবার কার্ড চালু করতে বাধ্য হয়েছে। তাতেও ক্রেতা সামাল দিতে না পারায় বছরের শেষ দিকে ফের ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রি করে টিসিবি। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরাও বাড়িয়ে দিয়েছেন খাবারের দাম। এতে বাড়তি খরচের কবলে পড়েছেন হোটেল-রেস্তোরাঁনির্ভর দিনমজুর, রিকশা শ্রমিক ও চাকরিজীবীরাও। রেস্তোরাঁয় খাবারে তাদের গুনতে হয়েছে দ্বিগুণ দাম।

জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে এ বছর মূল্যস্ফীতিও রেকর্ড গড়েছে। গত আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করে, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে অক্টোবরে ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ছিল গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ভোগ্যপণ্য ছাড়াও কয়েকটি পণ্য দাগ কেটেছে মানুষের মনে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্বর্ণ। স্বর্ণের দর লাখ টাকা ছাড়ায় বছরের মাঝামাঝি সময়ে। বছরজুড়ে আবাসন খাতে ছিল কিছুটা স্থবিরতা। রড ও সিমেন্টের মতো নির্মাণসামগ্রীর অস্বাভাবিক দর থাকায় উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে ছিলেন বেশ হিসেবি। এর প্রভাবে দাম বেড়ে যায় ফ্ল্যাটের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *