বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২১ অপরাহ্ন
আব্দুল আলীম নোবেল:
কক্সবাজার সদর উপজেলাধীন চৌফলদন্ডী ব্রীজের নিচে আগুন লেগে পুড়ে গেছে এফবি তানজিনা নামে একটি ফিশিং বোট। গত ২ জানুয়ারী গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় আগুন পুড়ে আহত হয়েছে ৪ জন। এই অগ্নি কান্ডের ঘটনায় কোটি টাকার পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তাৎক্ষণিক নুরুল আলম ও মেকানিক আবদুল হাকিম নামে দুই জনের নাম পাওয়া গেলেও আরো বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
পুড়ে যাওয়া এফবি তানজিনার মালিক ভারুয়াখালী পশ্চিম পাড়ার মমতাজ আহমেদের ছেলে মোহাম্মদ করিম বলে জানাগেছে।
তবে বোটের ভেতরে তেলের অনেক গুলো পুড়া ড্রাম পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এদিকে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছু গোপন রেখেছে।
ঘটনা স্থলে তখন ফায়ার সার্ভিসে সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পরে খবর পেয়ে গতকাল সকালে কক্সবাজার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক রিয়াজেরর নেতৃত্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বাইরে থেকে ফিশিং বোট মনে হলেও এই বোটটি মিয়ানমারে ইয়াবা ও তেল পাচারের কাজে ব্যবহার হচ্ছে স্থানীয় একটি তেল পাচারকারী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে । অগ্নি কান্ডের ঘটনাটি দু পক্ষের ইয়াবা কেন্দ্রীক রেষারেষিও বলেও অভিযোগ তুলছেন অনেকই।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়,বোটটিতে তেল ভর্তি ড্রামছিল। দুর্ঘটনাবশত আগুন লাগলেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।
পার্শ্ববর্তী রেজাউল করিমের মালিকানাধীন গ্যাস ও তেলের পাম্প থেকে নিয়মিত তেল পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই সিন্ডিকেট রয়েছে স্থানীয় নাসির, রেজাউল করিম সিকদারের শালা পাম্পের ম্যানেজার সাহেদ, পাম্পের মিটার ম্যান মিজান, নুরুল আলম প্রকাশ সুদিন নুরুল আলম, জানে আলম পুতু, ক্রস কামাল, পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী আরাফাত, আবুল হাসেম,হেরি মংসে প্রু আইক্যা হরিসহ আরো অনেকই।
প্রত্যেক প্রদর্শী সূত্রে জানা যায়, পাম্পের ম্যানেজার সাহেদের নেতৃত্বে গত দুই জানুয়ারী দুই ট্রাক তেল নিয়ে আসা হয় । আনুমানিক ১৮ হাজার লিটার। টাকার অংকে ২০ লক্ষ টাকা। গভীর রাতে এই তেল গুলো পাচারের উদ্দেশ্য ওই বোটে উত্তোলন করেছিল। বোটের ম্যাশিন নষ্ট হলে ওখানেই কিছুক্ষণ তাদের অবস্থান করতে হয়। দুর্ঘটনা বসত আগুন লেগে গেলেই বেরিয়ে আসে আসল খবর।
আরো জানা যায়,চৌফলদন্ডী ঘাট দিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে কয়েক লক্ষাধিক লিটার তেল পাচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আবার অনেকেই দাবি করছেন তেলের বিপরীতে নিয়ে আসছেন মরণ নেশা ইয়াবা । শক্ত ইয়াবা সিন্ডিকেট নৌ পথে ইয়াবার চালান নিয়ে আসে স্থানীয় ভারুয়াখালীস্থ লবণের ট্রাক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘাটটি প্রশাসনের হট লিস্টে রয়েছে। এত বড় ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মুখ খোলতে নারাজ। বোটটি স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছিরের কাছে জিম্মায় রয়েছে।
শাহেদ এর নামে একটি ইয়াবা মামলাও রয়েছে। ওই দিন সাহেদ তার এলাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তেল খালাসের জন্য শ্রমিক নিয়ে আসেন এমনটিও খবর রয়েছে।
এই বিষয়ে ম্যানেজার সাহেদ জানান,আমারা তেল পাচারের সাথে জড়িত নয়। আমার কাছে ডিজেল আছে অকটেন নেই।
গত ২১ সালের ফ্রেবয়ারীতে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ঘাট থেকে সমুদ্রপথে পাচার হয়ে আসা সাত বস্তা (১৪ লাখ পিস) ইয়াবা জব্দ করেছিল জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা। এ সময় দুজনকে আটক করা হয়েছিল। জব্দ করা হয়েছিল পাচার কাজে ব্যবহৃত ট্রলারটিও।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) রকিবুজ্জামান বলেন, এই ঘটনার সাথে কারা কারা জড়িত সুস্থ তদন্ত পূর্ব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।