বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০১:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বারবার নিউজ করার পরও নাই প্রশাসনিক তৎপরতা।রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার বিন্দু মাত্রও নেই কারও হস্তক্ষেপ এর নাম কি দেশ প্রেম? প্রশাসনিক নিরবতার কারণ কি অর্থ নাকি অন্য কিছু?এভাবে চুপ থাকলে কক্সবাজারের সব খাস জমির দখল হারাবে রাষ্ট্র। নষ্ট হবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এইভাবে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করতে থাকলে হুমকির মুখে পড়তে পারে কক্সবাজার শহর ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে জনজীবন। সামান্য ভূমিকম্পে হতে পারে বড় ধরনের ক্ষতি।
সরকার পতনের পর প্রশাসনিক নিরবতাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে খাস জমিতে প্রতিযোগিতা দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন।
৬৯০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) তবে কর্তৃপক্ষের এই এলাকাগুলো হলেও এখনো কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দেখেন শুধু কক্সবাজার শহরটি।শহরের বাইরেও বেশ কিছু অনুমোদনহীন ভবন গড়ে উঠলেও জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না তাদের।
সম্প্রতি কক্সবাজার শহরেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) কে আঙ্গুল দেখিয়ে লাগামহীনভাবে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এসব দখল কারীরা।কক্সবাজার শহরের লাইট হাউসপাড়া, সৈকতপাড়া,সুগন্ধা রোডের আলম গেস্ট হাউসের পিছনে, কলাতলী রোড়ের সুগন্ধা মোড়ে, জেল গেইটে, চন্দ্রিমা মাঠে, বাস টার্মিনাল, বিকাশ বিল্ডিংয়ের পাশে,গাড়ীর মাঠ এলাকায়,ঘোনারপাড়া, আলীর জাহাল, হাসেমিয়া মাদ্রাসার পাশে, পিটিআই স্কুলের পাশে, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, বাহার ছড়া, নোনিয়ারছড়া, বদরমোকামের পশ্চিম পাশে, মোহাজেরপাড়া, লিংক রোড়ের পাশে, কক্সবাজার সরকারি কলেজের পাশে সর্বোপরি পুরো শহর জুড়ে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক ভবণ তাড়াহুড়া করে চলছে নির্মান কাজ।এসব ভূমিধস্যূরা কন্ট্রাক্টে দিয়ে রাত দিন কাজ করে সেরে নিচ্ছে নির্মান কাজ।
এছাড়াও উত্তরনের আশপাশে চলছে অবৈধ বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ। পুরোদমে চলছে নির্মাণ কাজ। কিন্তু দেখার কেউ নাই।এসকল ভূমি ধস্যূরা কাউকে পরওয়া করে না।এত শক্তি কোথায় পেল তারা? সাধারণ জনগণ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না থাকায় বোবার মত দেখে থাকে।কিছু বলে না। প্রতিবেদক তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে নিরবতা ছাড়া করার কিছু নাই মুখ খোললে বিপদ।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে বিধায় উক্ত পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন আবশ্যক।
যেহেতু এতদাঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ পর্যটনশিল্প বিকাশের জন্য অপরিহার্য তাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ রেখে ভূমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তার পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ন রোধ করাসহ অননুমোদিতভাবে নির্মিত ভবণ ও স্থাপনা অপসারণ করা একান্তভাবে জরুরী।
উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালায় এমন নির্দেশনা থাকলেও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অনেকটা নিরব।বিশেষ করে খাস জমিতে ভবন নির্মাণ হলেও দেখা যাচ্ছেনা কউকের কোন ভূমিকা।
বিষয় টি জেলা প্রশাসনের দেখা শুনা করার দায়িত্ব থাকলেও রহস্যজনক কারণে তেমন কোন কার্যকারি পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। বেসামাল নগরায়নের যাত্রা মোটেও সুখকর নয় এমনটি জানিয়েছেন নগরবীদরা।
কক্সবাজার সৈকতপাড়ায় অনুমোদনহীন ও সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণ করছেন, জৈনক মুমিনুল হক,আব্দুল গফুর, আব্দুল মান্নান,জাফর সওদাগরসহ আরো অসংখ্য নাম না জানা অনেকে ।
দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বছরে কোটি কোটি পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয় বিশ্বের এই দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটক ছাড়াও দেশি-বিদেশি শতাধিক আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা অস্থায়ীভাবে বাস করেন এই শহরে।কিন্তু দীর্ঘ সময়ে অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে শহরটি। ফলে বিশ্বমানের পর্যটকবান্ধব নগরী না হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে শহরটি।
বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভার ও এর আশেপাশের এলাকায় সরকারের ১নং খাস খতিয়ানের জমি হওয়ায়, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তেমন কোন ভূমিকা নেয় না। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে একটি বিশেষ মহল রাতারাতি অট্টালিকা তৈরি করে যাচ্ছে, এসব ভবনের কোন অনুমোদন নেই। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকেও তেমন কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যাচ্ছে না।
এলাকার সচেতন মহলের পক্ষে কোন ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করতে অবিযোগ জানালে,সাথে সাথে ভূমিদস্যুদের কাছে এখবর পৌঁছে দিয়ে তাদের কাছ থেকে মোট অংকের উৎকোচ নিয়ে অভিযান ভেস্তে দেয়। ডিসি অফিসের ড্রাইভার নুরুন্নবীর নেতৃত্বে একটি শক্ত সিন্ডিকেট। এমনটি জানিয়েছেন অনেক ভোক্তভূগী।
এছাড়াও সৈকত পাড়া, আদর্শ গ্রাম, পাহাড়তলী, ঘোনার পাড়া, বাস টার্মিনাল, দক্ষিণ ডিককুল, ইসলামাবাদ, পুলিশ লাইন, লিংরোড কলেজ গেট এলাকা, সিটি কলেজ এলাকা,বাদশাঘোনা,জেলগেট এলাকাসহ এসব এলাকায় চরম বেপরোয়া ভাবে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। এখন যদি এদের লাগাম টেনে না ধরে তাহলে আগামীতে এইসব কোনভাবে আটকানো যাবে না বলে জানিয়েছেন “আমরা কক্সবাজার বাসি “সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।
অপরিকল্পিত নগরায়ন স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩ বছরেও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেনি কক্সবাজার। পৌর এলাকার হলি ডে মোড় থেকে শুরু করে দক্ষিণে মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ সীমান্ত পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাতশো হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ ও কটেজ গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ৬টি তারকা মানের হোটেলসহ ২৪টি বড় হোটেল রয়েছে। এছাড়া আড়াই শতাধিক রেস্তোরাঁও আছে এখানে। তবে এসব স্থাপনা গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে দিনদিন নানাবিধ নাগরিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। সমুদ্রের জীববৈচিত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
কক্সবাজারের পর্যটন খাতের অধিকাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে গত এক যুগে। এর পুরোটাই অপরিকল্পিতভাবে। পর্যটনকে কেন্দ্র করে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে মানা হয়নি পরিবেশ রক্ষা নীতিমালা। যেখানে সেখানে স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনেক হোটেল নির্মাণ হলেও রাস্তার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যানজটের কারণে শহরের জনপ্রিয় মার্কেটে যেতেও পোহাতে হচ্ছে দূর্ভোগ। অগোছালো স্থাপনার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থার হচ্ছে ব্যাহত।
২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত এক রুলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরও সংরক্ষিত এলাকায় নির্মাণ কাজ হয়েছে। এসব এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক জমি রয়েছে। এসবের কোন সুরাহাও হয়নি। আর স্থাপনাগুলো উচ্ছেদেরও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই বিষয়ে কক্সবাজার সহকারী কমিশনার(ভুমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী বলেন, বৃষ্টির কারণে অভিযানে যাওয়া যাচ্ছে না।বৃষ্টি কমলে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।তবে এখনো পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি তিনি।
সাবেক কউক চেয়ারম্যান কর্ণেল অবঃ ফোরকান আহমেদ বলেন হোটেল-মোটেল নির্মাণসহ কক্সবাজার ইতোমধ্যে অপরিকল্পিতভাবে অনেক সম্প্রসারিত হয়েছে। সড়ক-ড্রেনেজ সিস্টেমের উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছি।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ কাজে বাঁধা না দিলে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে নালা খাল এবং খাস জমি অপদখলে চলে যাবে। আর এসব অবৈধ স্থাপনার জায়গায় জমি দখল বেদখল নিয়ে খুন খারাবির মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বিদ্যমান বলে সচেতন মহলের অভিমত।
কক্সবাজার জেলার এডিসি রাজস্ব বিভীষণ কান্তি দাশ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান এইগুলো দেখার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। তারা আমাদের সহযোগিতা চাইলে,আমরা সহায়তা করব।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমড়োর নুরুল আফসার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া এসব বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা কঠিন।