শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মহেশখালীতে রাতের আঁধারে পাচারকালে গাছভর্তি ডাম্পার আটক নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরনে যুবকের পা বিচ্ছিন্ন !! কক্সবাজারের মহেশখালী প্রেসক্লাবের ত্রি -বার্ষিক বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত রামুতে ১০কেজি গাঁজা সহ আটক ২ স্বর্ণ চোরাচালান: বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ জব্দ রোহিঙ্গা শিবিরে মুফতি ওলামাদের বিশাল সমাবেশ: মায়ানমারে নিরাপদে প্রত্যাবাসনের দাবি! লামা অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা গ্রাম পরিদর্শন করেন পার্বত্য উপদেষ্টা ক্রীড়া, পর্যটন ও শিক্ষার অগ্রগতি হবে সীমান্তের একমাত্র সমাধান-ইউএনও টেকনাফ রামুতে বনবিভাগের অভিযানে বিপুল পরিমাণ সেগুন ও মেহগনি কাঠ জব্দ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক

রোহিঙ্গা শিবিরে মুফতি ওলামাদের বিশাল সমাবেশ: মায়ানমারে নিরাপদে প্রত্যাবাসনের দাবি!

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া থেকেঃ
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১ ওয়েস্টের ই/৬ ব্লক সংলগ্ন মফিজের মাঠে ২৫ ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১০টায় এক বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সমাবেশে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন মুফতি, ওলামায়ে কেরাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, যুব সমাজের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রোহিঙ্গা গ্রুপ ভিত্তিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রোহিঙ্গা নেতা দীল মোহাম্মদ।
সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানানো। বক্তারা তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবি তুলে ধরেন। তারা বলেন, আমরা আরাকান থেকে বিতাড়িত, আমাদের মাতৃভূমিতে ফিরতে হবে। যদি আমাদের দেশ মায়ানমারের জন্য রক্ত দিতে হয়, তবে তা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নয়, বরং আমাদের ভূমি আরাকানে গিয়ে স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে হবে।
সমাবেশের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় এবং এরপর বিভিন্ন ইসলামিক সংগীত পরিবেশন করা হয়, যা সমাবেশের পরিবেশকে ধর্মীয় চেতনায় পূর্ণ করে তোলে। বক্তৃতা দেন রোহিঙ্গা নেতা আবু আলম, আব্দুল রহিম, মৌলভি জুবায়ের, মৌলভি রহমত করিম, আনোয়ার সাদেক, মাস্টার মুজিব এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বক্তারা একযোগভাবে নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার দাবির প্রতি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করেন এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, যুব সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, যারা একসাথে রোহিঙ্গা জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য আওয়াজ তোলেন। তারা বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি সমাবেশ নয়, এটি আমাদের আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার সংগ্রামের অংশ। সমাবেশে উপস্থিত বক্তারা একক কণ্ঠে তাদের মৌলিক অধিকার ফিরে পেতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা এই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন, যা ছিল ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সিরাজ আমিনের নেতৃত্বে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি জানান, সমাবেশটি শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এখানে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টি হয়নি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই সমাবেশটি প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ও শর্তসাপেক্ষে আয়োজন করা হয়েছে, এবং এটি রোহিঙ্গা জনগণের মধ্যে একতার বার্তা দেয়।
এই সমাবেশটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে তাদের মাতৃভূমি মায়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য সংগঠিত করার এক বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বক্তারা এই সমাবেশের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের দাবি জানিয়েছেন, যাতে তারা শিগগিরই একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও টেকসই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে।
এদিনের সমাবেশটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি নতুন আশার সঞ্চার করেছে। তারা আশা করছেন, তাদের সংগ্রামের মাধ্যমে শীঘ্রই তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং তারা তাদের জন্মভূমি আরাকানে ফিরে যেতে সক্ষম হবেন।
এটি শুধু একটি প্রতিবাদ ছিল না, বরং এটি ছিল রোহিঙ্গাদের অধিকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এক শক্তিশালী বার্তা। তাদের দাবি সারা পৃথিবী জুড়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা তাদের সংগ্রামকে নতুন মাত্রা যোগ করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *