জাহিদ হাসান,লামা(বান্দরবান) প্রতিনিধি।।
পার্বত্য লামায় ১৬ ত্রিপুরা পরিবারের জুমঘর পোড়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা ১১:২০ ঘটিকায় তিঁনি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত সরই ইউনিয়নের টঙ্গঝিরি পূর্ববেতছড়া পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, সরকার সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছেন। অনাকাঙ্খিত অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তার সরকারে পক্ষে থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিঁনি ক্ষতিগ্রস্ত ত্রিপুরা পরিবারগুলোর দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে, শিক্ষা, ওয়াটার স্যানিটেশনসহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মামলা ও তাৎক্ষণিক চার আসামী গ্রেফতার করতে পারায় পুলিশের প্রসংশা করেন। আগুনের ক্ষতচিহ্ন ঘুরে দেখার পর উপদেষ্টা ঘটনাস্থলেই স্থানীয় গন্যমান্যদের সাথে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন।এসময় রফিকুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি আগ্রাসনের ভয়াবহ ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, এলাকার মসজিদ মাদ্রাসা এমনকি কবরস্থানের জায়গাটুকুও গ্রাস করে নিচ্ছেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের লোকেরা। তারা শিক্ষা কার্যক্রমের আদলে স্বনামে বেনামে আট হাজার একরেরও বেশি ভূমি দখল করে রেখেছে। এর ফলে সরই ডলুছড়ি মৌজার শত শত পাহাড়ি বাঙালিরা চাষের জায়গা হারিয়ে, জীবন জীবীকা নির্বাহে চরম সংকটে পড়েছে। সাবেক মেম্বার আব্দুল হালিম বলেন, স্থানীয় একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কসমোসহ অন্যান্য উদ্যােক্তারা যেনতেনভাবে এখানে ভূমির মালিক বনে যাচ্ছে। বিপরীতে স্থানীয় পাহাড়ি বাঙালি পরিবারগুলো ভূমিহীন হচ্ছে। এসব দালাল চক্রের আগ্রাসন রোধে প্রশাসনের দৃষ্টি কামণা করা হয়। মতবিনিময় শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব মানুষের উন্নয়ন, নিরাপত্তা বিধানে বৈষম্যমুক্ত চেতণা লালন করে। উপদেষ্টা স্থানীয়দের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে আরো বলেন, ‘এখানকার পাহাড়ি বাঙালির মধ্যে পারস্পারিক ভ্রাতৃপ্রেম রয়েছে, তারা একই প্লেটে বসে যা আছে, তা ভাগ করে খায়। প্রত্যেকেই ধর্ম বর্ণের ঊর্ধ্বে খুবই মানবিক এবং সম্প্রীতির বন্ধনে রয়েছে।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা সত্য টা লিখতে থাকেন এবং আপনাদের লেখা প্রতিটা সংবাদ আমার কাছে পৌঁছাবেন আমি সে মতে কাজ করবো। অবৈধ সকল কর্মকান্ড রোধ করে এই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় সবাই সচেতন থাকতে হবে।’ এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২ বান্ডিল করে টিন ও খাদ্য সমাগ্রী প্রদান করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা তিঁনি এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত একটি ব্রিজ উদ্বোধন করেন। শেষে দুপুর পৌনে দু’টার সময় লামা পৌরসভা মিলনায়তনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে কথা বলেন। ছাত্রদের দাবির প্রেক্ষিতে উপদেষ্টা পর্যটন শিল্পের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেন। তবে পরিবেশ ঠিক রেখে এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সকল মহলকে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য অনুরোধ জানান। উপদেষ্টার সফর সঙ্গী ছাড়া অন্যান্যদের মাঝে ছিলেন, বান্দরবান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রফেসর থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক মোঃ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার শহিদুল্লা মোঃ কাওছার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী, লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অ:দা) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট রুপায়ন দেব, লামা সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ আনোয়ারুল প্রমুখ। লামা পৌরসভার তংথমাং রিসোর্টে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে উপদেষ্টা লামা থেকে বিদায় নেন।