সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৪:০৭ অপরাহ্ন
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া:
কক্সবাজারের উখিয়ার গ্রামগঞ্জে দিন দিন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইনভিত্তিক জুয়া। স্মার্টফোন ও সহজ ইন্টারনেট সুবিধার সুযোগে এলাকার তরুণ ও যুবকরা জড়িয়ে পড়ছে এই অবৈধ কর্মকাণ্ডে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী কিছু শিক্ষার্থী ও কর্মহীন বেকার যুবকদের একাংশ এই অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে এক ধরনের ‘সহজ উপার্জনের স্বপ্নে’ বিভোর হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় তৈরি হয়েছে অনলাইন জুয়ার ছোট ছোট সিন্ডিকেট। এরা মোবাইল অ্যাপ, ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ‘স্পিন’, ‘বেটিং’, ‘টস গেম’, ‘ক্রিকেট বেটিং’সহ নানা রকম জুয়ার আয়োজন করছে। রাত গভীর হলেই এসব গেমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এক শ্রেণির যুবক। অনেকে আবার বাসার টিভি, ফ্রিজ, এমনকি পরিবারের গয়নাগাটি পর্যন্ত বিক্রি করে এই জুয়ার টাকা জোগাড় করছে।
উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকার কয়েকজন ছেলেকে আগেও ভালোমত চলতে দেখেছি। এখন তারা সারাদিন মোবাইলে ব্যস্ত, জিতলে আনন্দ, হারলে রাগ করে চিৎকার-চেঁচামেচি। অনেকে চুরি করছে, আবার কেউ কেউ মাদকে জড়িয়ে পড়েছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনলাইন জুয়ার প্রভাবে উখিয়ায় চুরির ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। রাতের আঁধারে বাড়িঘর, দোকান, এমনকি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনা এখন প্রায় নিত্যদিনের বিষয়। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখনো চোখে পড়ছে না।
উখিয়া থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরাও বিষয়টি জানি। কিছু অভিযোগ এসেছে। তবে অনলাইন জুয়া শনাক্ত ও এর মূল হোতাদের ধরতে প্রযুক্তিগত সহায়তা দরকার, যা অনেক সময় আমাদের সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হয় না।
সুশীল সমাজের নেতা নুর মোহাম্মদ শিকদার বলছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে উখিয়ার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়বে। তারা অভিভাবক, শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবিলম্বে অনলাইন জুয়া বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রযুক্তি সহায়তায় নজরদারি বৃদ্ধি এবং তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও খেলাধুলার সুযোগ তৈরির দাবি উঠেছে সচেতন নাগরিকদের পক্ষ থেকে।