সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ছাত্রদল কর্মীর মৃত্যু মহেশখালীতে প্রয়াত সাংবাদিক শফিকুল্লাহ খাঁনের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণসভা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি’র অভিযানে ১ লক্ষ ২০ হাজার ইয়াবাসহ আটক ১ !! উখিয়ায় দিনদুপুরে চাঞ্চল্যকর চুরি: সহকারী শিক্ষকের ঘর থেকে ৪.৫ লক্ষ টাকা ও ৩৩ লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার লুট টেকনাফে বাকপ্রতিবন্ধী আলমগীরকে গুলি করে হত্যা, মূলহোতা নুরুল আলম ডাকাত গ্রেফতার আলীকদম সেনা জোনের অভিযানে জেএসএস (মূল)-এর ৯ সন্ত্রাসী আটক, অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার পাহাড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে প্রাণ হারালো তরুণ মেহরাব: দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজন কঠোর পর্যটন নীতিমালা উখিয়ায় পুলিশের ‘ডেভিল হান্ট’ অভিযান : আওয়ামী লীগের ১০ নেতা-কর্মী গ্রেফতার চকরিয়ায় আ. লীগের ঝটিকা মিছিল, সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতার ৫৫ রোহিঙ্গাদের জন্য সুইডেনের ২.১ মিলিয়ন ডলার অনুদান ঘোষণা

সুগন্ধায় শফিক ,সোহেল, রাসেল ও ফরিদ সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজির নতুন কৌশল

//সরকারি জায়গায় ফরিদের ফিস ফ্লাইয়ের দোকান
// অবৈধ মিটারে বিদ্যুৎ চুরি
//নাগরদোলা থেকে ‘কোট’, ফিস ফ্রাইয়ের ‘আড়াল’, সর্বগ্রাসী চাঁদাবাজি
//প্রশাসনের ‘ঢাল’, প্রভাবশালীর ‘ছায়া’, বেপরোয়া দখলযজ্ঞ
//উচ্চ আদালতের ‘দোহাই’, বিদ্যুৎ বিল ‘কালেকশন’, সর্বত্র ‘নিয়ন্ত্রণ’

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গেলো ঈদুল-ফিতরে সুগন্ধা বীচে ১৫ দিনের জন্যে নাগরদোলার জন্যে অনুমতি দেয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক। উক্ত সময়ের মধ্যে নাগরদোলার মালিক থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেয় কক্স ভিউ ফিস ফ্লাইয়ের মালিক ফরিদ। এমন অভিযোগ আনেন জনৈক ব্যবসায়ী। হাতে আসা একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায় ফরিদ তার কাছ থেকে ১ লক্ষ ২০ টাকা নগদে নেন। তবে ফরিদ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দু’টি পক্ষ গেলো ঈদুল ফিতরে সুগন্ধা বীচে লগর দোলার জন্য আবেদন করে। জেলা প্রশাসন আমাকে অনুমতি দিয়েছেন। এজন্য সরকারের রাজস্ব শাখায় তিনি ৫০ হাজার টাকা জমা করেন। অবশিষ্ট ৭০ হাজার টাকা তিনি ব্যবসায়ীক কাজে লাভ হিসেবে নেন। ফরিদের বিরুদ্ধে নিলীমা রিসোর্টের বিপরীতে সরকারি খাস জায়গা দখল করে ফিস ফ্লাইয়ের দোকান নির্মাণের অভিযোগ আছে। এছাড়া সুগন্ধা বীচে তার তিনটি ঝিনুকের দোকানও রয়েছে। তবে তিনি ঝিনুক মার্কেটে একটি ও ফিস ফ্লাইয়ের একটি দোকান আছে বলে স্বীকার করেন।

এদিকে তার সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা  শফিক, সোহেল ও রাসেল’র বিরুদ্ধেও বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া যায়। এঁদের মধ্যে রাসেল সুগন্ধা মারমেডের সামনে সরকারি খাস জায়গা দখল করেছেন। নীলিমা রিসোর্টের বিপরীতে সরকারি জায়গা দখলকারীর অন্যতম এই চারজন। তারা সিন্ডিকেট করে বিচ বাইক, বিনোদন জোন, ভ্রাম্যমান বাথরুম, সরকারি খালি দখল নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সুগন্ধা বীচের বেশ কয়েকজন বযবসায়ী। তাঁদের মধ্যে শফিকুর রহমান প্রকাশ (শফিক মটর) ঢাকার একটি কোম্পানি থেকে চুক্তিভিত্তিক বাইক কন্ট্রাকে নিয়ে আসেন। জেলা প্রশাসন যেসব বিচ বাইকের অনুমোদন দিয়েছেন তার থেকে আর-ও কয়েকটি বাইক অনুমতি ব্যতিরেকে চলছে। যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসবের বিচ কর্মী মাহবুবুের নাম উঠে আসে। বিচ কর্মী হয়েও মাহাবুবের চাল চলনে বুঝা যায় তাঁর আয়ের উৎস কি ?  সুগন্ধা বিচে টিকটিকে চাকরি করে এমন কয়েজন ও কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সুগন্ধা বীচে যে-সব টিকটকের অনুমোদন দিয়েছেন জেলা প্রশাসন, তার থেকে বেশি টিকটক অবৈধভাবে বসিয়েছে। যার সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষেরও নেই। না থাকারই কথা। বিচ মাহবুবসহ আরও কয়েকজন মিলে অবৈধ আয়ের লক্ষ্য টিকটক মালিক পক্ষের সমঝোতা করে একের ভিতর দুই করে দিয়েছেন। জেলা অভিযানে ধরা পড়বে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। এই দলের সাথে
জেলা প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তার, রাজনৈতিক নেতা, ট্যুরিস্ট পুলিশ, বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির লোকজনও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, সৈকতের বিভিন্ন মোড়ের, ডাব, ঝিনুক, ফিস ফ্রাই, আইসক্রিম সহ বিভিন্ন ভাসমান দোকান বসিয়েও দৈনিক নিয়মিত চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ফরিদ ইদুল ফিতর ও ইদুল আজহাকে উপলক্ষে সুগন্ধার বালিয়াড়িতে  শিশুদের বিভিন্ন খেলনা সহ নানা রাইড অনুমোদন নিয়ে থাকলেও তা সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে পরিচালনা করে। প্রশাসন থেকে নিয়ম অনুযায়ী  ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় সহ সুনিদির্ষ্ট সময়ের বাইরেও অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে সেই ফরিদ সিন্ডিকেট।

অনুসন্ধান বলছে, সুগন্ধায় ডেস্টিনি হোটেলের দক্ষিণপাশে সরকারি ৩ কাটার একটি জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে। যা বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার বেশি। প্রশাসনের এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় অবৈধ দখলদারেরা সম্প্রতি  ঐ জায়গায় ভূয়া খতিয়ান দিয়ে  উচ্চ আদালতের দারস্থ হচ্ছেন বলে জানা যায়।  সেই প্লটে দেওয়ালের ভিতরে কিছু ব্যবসায়ীক জিনিসপত্র সহ বিভিন্ন জেট-স্কি দেখা যায়।

নাম জানাতে অনিচ্ছুক তাদের সাথে থাকা একজন জানান, সম্প্রতি সুগন্ধা, লাবণী ও কলাতলীতে উচ্চ আদালতের দোহায় দিয়ে কয়েক একর সরকারি খাস জায়গা দখলে নিয়েছে প্রভাবশালী মহল। তাদের অনসরণ করে এই সিন্ডিকেট উক্ত জায়গা দখলে নতুন প্রতারণার ফাঁদ সৃষ্টি করেছে।

গত ৩ মে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের বেলাভুমিতে শতাধিক দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুত অফিসের কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে ডেসটিনি বিল্ডিং ও তাদের দখলকৃত ৩ কাটার জায়গার পশ্চিমে একটি বৈদ্যুতিক পিলারে তাদের মিটার দেখা যায়। উক্ত মিটার নাম্বার – ০১০৪১০০৪৯৪৬৭।

পিডিবির মিটার নিতে জমির মালিকানা দলিল সহ নানা ডকুমেন্টসের প্রয়োজন পড়ে কিন্তু উক্ত সিন্ডিকেটের বৈধ জায়গার দলিল না থাকলেও অবৈধভাবে মিলেছে মিটারের বৈধতা। উক্ত মিটার নিয়ে প্রায় শতাধিক দোকানে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০-৫০০ টাকা বিদ্যুত বিল নেয় উক্ত সিন্ডিকেট ।

ইতিমধ্যে কলাতলী বীচে অবৈধ লকার, বাথরুম  সহ নানা স্থাপনা তুলে দিলেও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সেই ২০২৪ সালে উচ্ছেদ হওয়া বাথরুম আবারও চালু করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন সিন্ডিকেটের ব্যক্তিরা । এছাড়া ইতিমধ্যে প্রশাসন ম্যানেজ করে কলাতলীতে উচ্ছেদ হওয়া অবৈধ লকার আবারও চালু করে।

কে সেই সোহেলঃ
সাতকানিয়া থেকে কক্সবাজার এসে শহরের বাহারছড়ার গোলচত্ত্বরে একটি মোটর সাইকেল মেরামতের দোকানে কাজ করতে সোহেল নামে এক যুবক। পরে পরে বিএনপির জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আক্তার এর ভাইয়ের মেয়ে বিয়ে করে হয়ে যান কক্সবাজারের জামাই।  তার বিষয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা বীচ সংলগ্ন ফিশ-ফ্রাইয়ের দোকানের সাথে লাগোয়া সৈকতের বালিয়াডিতে অবৈধভাবে শিশুদের জন্যে খেলনা ইলেকট্রিক রেল, মিনি সিনেমা হল সহ নানা খেলাধুলার সরঞ্জাম বসিয়ে প্রায় কয়েক কাটা জায়গা দখলে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
উক্ত ব্যবসার কোন বৈধ কাগজপত্র তারা দেখাতে পারেনি। এমনকি সেখানে ব্যবহৃত বিদ্যুত সংযোগও অবৈধ । এছাড়া সেই সোহেলের রয়েছে একাধিক ক্যামেরার কার্ডও যা ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এবিষয়ে তাকে ফোন দিলে রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

ফরিদের কব্জায় বীচে যা চলেঃ

ফ্যাশিবাদ সকারের আমলে অবৈধভাবে নেওয়া বেশিরভাগ কার্ড বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতাদের হয়ে কাজ করছেন ফরিদ। তিনি ভাড়া তুলে ব্যাংকে জমা করেন পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের একাউন্টে। তার নিয়ন্ত্রণে ১৫/১৬ টি দোকানের কার্ড রয়েছে ।

কক্সবাজারের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আওয়ামী সরকারের আমলের মন্ত্রি পরিষদের সাবেক সচিব শফিউল আলমের নাম বিক্রি করে তার এক আত্বীয় প্রায় ৩০ টি দোকানের কার্ড ভাগিয়ে নেয়। পরে সেখান থেকে কিছু কার্ড বিক্রি করে বর্তমানে প্রায় ১৫টি কার্ড  ভাড়া দিচ্ছে।
সাবেক সচিবের রিলেটিভ পরিচয়দানকারি সজিবের ভাই জহরুল আলমের হয়ে ঝিনুক মার্কেটে উক্ত দোকানের কার্ড ভাড়া দেওয়া সহ দেখভালোর দায়িত্বে আছে ফরিদ।

সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য রাসেল যিনি কক্সবাজার পৌরসভার ঘোনাপাড়ার বাসিন্দা ও বীচ-বাইকের নেতা। তার কাছে রয়েছে একাধিক ক্যামেরা, ঝিনুক ও ওয়াটার বাইকের কার্ড।  এ বিষয়ে রাসেলকে ফোন দিলে রিসিভ না করায় যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

পর্যটনের সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাফিস ইনতেসার রাফি বলেন, ‘সরকারি জায়গা দখল, হিসেবের বাইরে গিয়ে টিকটক,বাইক, লকার বসানোর কোন সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *