মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

দুর্নীতির বরপুত্র সদর পিআইও’র সহকারী আবছার

আবারও ‘দৈনিক কক্সবাজার ৭১’ পত্রিকা বাজার থেকে উধাও

* এলএ শাখার সার্ভেয়ার বাকিরুল ইসলামের খুঁঠির জোর কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

গতকাল ৩ জুন/২৫ ইং তারিখের প্রকাশিত ‘দৈনিক কক্সবাজার ৭১’ পত্রিকা সকালেই গায়েব হয়ে যায়। গত ২ জুনের মতো আজ ও সকাল থেকে বিভিন্ন এলকা থেকে পাঠকদের ফোন আসতে থাকে পত্রিকা আধো প্রকাশ হয়েছে কিনা। রাতে পত্রিকার ‘দৈনিক কক্সবাজার ৭১’ ফেইসবুক পেইজে রাত ১২ টায় পত্রিকার ই পেপার আপলোড দেয়া হয়। আর সকালে পত্রিকা হকারদের হাতে যায়। কিন্তু সকাল ১০ টার পর থেকে বিভিন্ন লোক ফোন আসায় বাজারের হকার ও এজেন্টদের কাছ থেকে খবর নিয়ে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয় সব পত্রিকা বাজার থেকে গায়েব হয়ে গেছে। তবে এবার জানা গেছে সদর উপজেলা পিআইও‘র সহকারী আবছরের লোকজন হকার থেকে সব পত্রিকা কিনে নিয়েছে। এতে অবশ্যই জেলা ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা কার্যালয়ের সার্ভেয়ার বাকিরুলের লোক ও জড়িত বলে জানান অনেকে।

এদিকে শত জালিয়তির আর দুর্নীতির মুল হোতা এলএ অফিসের সাভেয়ার মোঃ বাকীরুল ইসলামকে গত ২৪ এপ্রিল ২৫ ইং তারিখ লক্ষিপুর বদলী আদেশ হওয়ার পর ও মাসের পর মাস কক্সবাজার এলএ শাখায় কি ভাবে কর্মরত আছে এমনটি প্রশ্ন সাধারণ মানুষ সহ ভুক্তভোগিদের। তাদের প্রশ্ন- সার্ভেয়ার বাকিরুলের খুঁঠির জোর কোথায়? এভাবে দিনের পর দিন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হলেও জেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়না কেন? তবে কি বুঝে নেব তাকে এখানে রাখা হলে জেলা প্রশাসকেরও লাভ আছে? এমনটি বলেন মহেশখালীর ভুক্তভোগি আব্দুল আলিম। তাকে অতি দ্রুত কক্সবাজার থেকে তার বদলিকৃত কর্মস্থলে পাঠানোর দাবী করেন সচেতন মহল।

অন্যদিকে কক্সবাজার সদর পিআইও অফিসের সহকারী কে এই আবছার?

কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল এলাকায় আবছার মিয়ার দরিদ্র পিতা আব্দু শুক্কুর ছিলেন স্থানীয় মগ্গুল হোটেলের মালিকের রিকশা চালক। বহু কষ্টে আবছার মিয়াকে পড়ালেখা করান। রিক্সা চালক পিতার অতি আদরের সন্তান আবছার মিয়া পিআইও অফিসের সহকারী হিসাবে কাজ করলেও তার মাধ্যমে সুবিধা আদায় করেন ইউএনও ও পিআইও উভয়ই। ঠিকাদার ছাড়া নিজে কাজ করে মুজিব বর্ষের ঘর নির্মান থেকে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। তার পরও কাবিকা কাবিটা সহ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রকল্প পাস করিয়ে দিয়ে আয় করে এখন কোটি টাকার মালিক। আবছার মিয়ার জীবনযাপন ও সম্পদের বিবরণ বিশ্লেষণে উঠে এসেছে এক ভয়ঙ্কর চিত্র। সীমিত বেতনের এই সরকারি কর্মচারী গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স ভবন, ইটভাটা, স্কেভেটর, প্রাইভেট কারসহ একাধিক সম্পত্তির বিশাল সমাহার, যা তার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। অথচ মাত্র আট বছর আগেও পরিবারটি ছিল স্বল্পআয়ের সাধারণ পরিবার। অথচ আজ তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের নামে রয়েছে একাধিক জমি ও বিপুল সম্পদ, যার বৈধ উৎস নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি প্রকল্পের কাজ, অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ের প্রক্রিয়ায় তদবির, ঘুষ এবং ফাইল ম্যানিপুলেশনের মাধ্যমে আবছার মিয়া গত কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন। রামুতে তার নিজস্ব ডুপ্লেক্স বাড়ির সীমানা দেয়ালে বসানো হয়েছে উচ্চমূল্যের টাইলস, যা বিলাসবহুলতার একটি বড় প্রমাণ।

গোপন সূত্র ও স্থানীয় তথ্য অনুযায়ী, তার বা তার নিকট আত্মীয়দের নামে রয়েছে, রেলস্টেশন সংলগ্ন ২০ শতাংশ জমি, বাইপাস ব্র্যাক অফিসের পাশে ১৫ শতাংশ জমি, ব্র্যাক অফিসের পশ্চিমে ২০ শতাংশ জমি, নানার বাড়ি উখিয়ার ঘোনায় জমি, সাবেক রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাজল-এর কাছ থেকে কেনা জমি, বাইপাসে মোজাফফরের ছেলে ও পুত্রবধূর নিকট থেকে কেনা জমি, দর্পণ বড়ুয়ার নিকট থেকে কেনা জমি সহ কক্সবাজার শহরের অভ্যন্তরে একাধিক জমি। বেশিরভাগ জমির দলিল তার বাবা, ভাই, বোন ও অন্যান্য আত্মীয়দের নামে, যা সম্পদের প্রকৃত উৎস গোপনের একটি কৌশল বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও বাণিজ্যিক সম্পদ ও যানবাহনের মধ্যে রয়েছে, নিজস্ব প্রাইভেট কার, স্কেভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র), কলঘর নুরুল হকের থেকে কেনা সাগরের সাথে শেয়ারে এনএস ব্রিকফিল্ড (ইটভাটা) ও রামু উপজেলা গেইট সংলগ্ন কম্পিউটার দোকান।

আরো জানা যায়, বাইপাস এলাকায় জিন্নুরাইন জামে মসজিদের পাশে কবরস্থান নির্মাণের অজুহাতে জমি কম মূল্যে কিনে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে কার্যত জমি দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। বাস্তবে সেখানে কোনো কবরস্থান নির্মাণ শুরু হয়নি।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত আবছার মিয়ার বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি কোনো কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সরকারি চাকরির নির্ধারিত বেতনের পরিধি অনুযায়ী এত বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, বিগত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামিলীগের ছত্রছায়ায় থেকে আবছার মিয়া দীর্ঘদিন ধরে পিআইও অফিসের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসলেও বর্তমান সরকার আমলেও তা অব্যাহত আছে। বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি রাখে। এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত অতিব জরুরী বলে মনে করেন সচেতন মহল।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *