মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী,টেকনাফ:
টেকনাফে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছ। চলতি মওসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ অর্জন বলে কৃষকরা জানান।কম খরচে এ ফসলে
কৃষকরা অতি লাভবান হওয়ায় ভুট্টা চাষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।স্বল্প
পুজিঁ, ঝুঁকিহীন, সেচ ও সার প্রয়োগে সুবিধা বলেই স্থানীয় কৃষকদের মাঝে
রীতিমত এচাষের প্রতিযোগীতা চলছে। ভুট্রা চাষে আশানুরুপ ফলন হওয়ায় কৃষকদের
মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। অন্য জাতের ক্ষেতের মতো ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায়
কৃষকরা ভুট্টার চাষের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়েছে। এখানকার উৎপাদিত ভুট্টার চাহিদা
মিটিয়ে অন্য উপজেলায়ও নেওয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কারিগরী
সহযোগীতা পেলে গ্রামীণ কৃষকরা ভুট্টা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য বদলে সহায়ক
ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নত জাতের ভুট্টার চাষ করে কৃষকরা প্রচূর টাকা আয়ের
মাধ্যমে জীবন জীবিকায় অবদান রাখবে বলে গ্রামীণ কৃষকরা মনে করছেন।
ভুট্রাকে টেকনাফের মানুষ বলে ‘মক্কাগোলা’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সব ইউনিয়নেই কম-বেশী ভুট্রার চাষাবাদ হয়।
তবে বেশী চাষাবাদ হয় টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং, উলুচামরী,
রঙ্গিখালী, পানখালী, মোচনী, মরিচ্যাঘোনা, হোয়াইক্যংয়ের মরিচ্যাঘোনা,
কম্বনিয়া পাড়া,খারাংখালী, নয়াবাজার, কাঞ্জরপাড়া, রইক্ষ্যং, দৈংগাকাটা,
লাতুরীখোলা, হরিখোলা, সাবরাং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের কিছু এলাকার কৃষক
ভুট্টার চাষ করে থাকেন। তবে হ্নীলা লেচুয়াপ্রাং ও হোয়াইক্যংয়ের
কম্বনিয়াপাড়ায় বসবাসকারী প্রায় সব কৃষক মৌসুম ভিত্তিক ভুট্টা চাষ করেন।
এখানকার কৃষি-অকৃষি পরিবারগুলো সহজে ওৎপ্রোতভাবে ভুট্টা চাষ করে প্রচুর
টাকা আয় করছে বলে জানা গেছে। ভুট্টা চাষীদের দেখা দেখিতে অন্য চাষে
নিয়োজিত কৃষকগণও বর্তমানে এ চাষের দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। কৃষকরা জানান,
মাত্র ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ভুট্টা বা মক্কা গোলার ফলন ঘরে তুলতে
পারে। প্রতিবছর শীত মৌশুমে কৃষকরা ভুট্টা বীজ বপন করে থাকে। শীতের শেষের
দিকে এফল বাজারে বিক্রি করে। বীজ মাটিতে বপন করে পুরো সিজনে শুধুমাত্র
১-২ বার জমিতে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেতে প্রতি ৪০ শতকে কৃষককে
মাত্র ২-৩ বস্তা ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয়। ৩ ধরণের ভুট্টা এখানকার
কৃষকরা চাষ করে থাকেন। হাইব্রীড-১৯২১, দেশী ভুট্টা ও এডিসি ভুট্টা। এতে
হাইব্রীড-১৯২১ উন্নত জাতের বীজ টেকনাফের কৃষকরা বেশী চাষ করেন। এতে ভাল
ফলনও পেয়েছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৪০ শতক জমিতে ১৪ হাজার ভুট্টার বীজ বপন
করা যায়। একেকটি গাছে ২-৩টি ফল ধরে। যা প্রতিটি কাঁচা ১০/১৫ টাকা হিসাবে
শত বা হাজার হিসেবে বিক্রি করে থকে। সাধারণ কৃষকরাও ভুট্টা ক্ষেত করে
সহজেই লক্ষাধিক টাকা আয় করছে। দেখা গেছে, টেকনাফের উন্নয়ন বঞ্চিত কৃষি
এলাকা হ্নীলার লেচুয়াপ্রাং দেড় শতাধিক পরিবার বর্তমানে এচাষের উপর
নির্ভরশীল। তারা অন্য চাষের চাইতে ভুট্টা বা মক্কা গোলা চাষে কল্পনাতীত
টাকা আয় করছে। তাই উক্ত এলাকার কৃষকরা বেশী খুশী। কৃষি অধিদপ্তরের
কারিগরী সহযোগীতা পেলে কৃষকরা আরো বেশী লাভবান হবে। উপজেলা কৃষি দপ্তর
থেকে উন্নত জাতের ভুট্রা বীজ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিউল আলম কুতুবী বলেন, ‘এ বছর
টেকনাফ উপজেলায় ২২৫ হেক্টর জমিতে ভুট্রার চাষাবাদ হয়েছে। টেকনাফ উপজেলায়
ভুট্রার বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ২২০ হেক্টর। নতুন জাত সর্ম্পকে
প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করে
যাচ্ছি। যে কোন চাষে কৃষকদের কারিগরী সহায়তা প্রদানে আমাদের মাঠ পর্যায়ের
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এ কাজে নিয়োজিত আছেন’।
Related