চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
মহান আল্লাহ পাকের রহমত কামনা এবং বিশ্বজুড়ে মানবতার এই দুঃসময়ে মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে মানবিক দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে হযরত শাহসুফি আব্দুস সোবহান মাইজভাণ্ডারী (রহ.)’র ৪র্থ তম বার্ষিক ওরশ শরীফ ৮ মার্চ শুক্রবার কক্সবাজারের দক্ষিণ কলাতলী শুকনাছড়িস্থ মাজার শরীফ প্রাঙ্গণে সম্পন্ন হয়েছে।
পবিত্র ওরশ শরীফ উপলক্ষে শুক্রবার (৮ মার্চ) সারাদিন মাজার শরীফ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল বাদে ফজর পবিত্র খতমে কুরআন, বাদে জোহর পবিত্র খতমে গাউছিয়া, বাদে আছর মাজার শরীফ গোসল ও গিলাফ ছড়ানো অনুষ্ঠান ও বাদে মাগরিব গরীব দুঃস্থ এতিম অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পরে বাদে এশা থেকে ওয়াজ, মিলাদ, জিকির ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
হযরত শাহসূফী আব্দুস সোবহান মাইজভাণ্ডারী (রহঃ)’র জীবন কর্মের ওপর আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন তাঁরই আধ্যাত্মিক উত্তরসূরী ও মাজার শরীফের পরিচালক হাফেজ ক্বারী মাওলানা কেরামত আলী মাইজভান্ডারী।
তিনি বলেন, মানুষ যখন অশান্তি অবিচার ও জুলুমের প্রান্তসীমায় উপনীত হয়, তখন সাধক বুজুর্গ ওলীদের শরণাপন্ন হয় পরিত্রাণের আশায়। তাই, বর্তমানে নিপীড়িত মানবতার পরিত্রাণ কামনায় ওলী বুজুর্গের প্রদর্শিত দয়া, সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার শিক্ষা মনে প্রাণে গভীরভাবে ধারণ করতে হবে এবং সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। হযরত শাহসুফি আব্দুস সোবহান মাইজভাণ্ডারী (রহ.) আজীবন মুক্তিকামী নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে উৎসর্গীত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, আধুনিক সভ্যতা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, ব্যাপক উৎপাদন, অকল্পনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দ্রুত পরিবহন, মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। তবে, আধ্যাত্মিকভাবে আমরা বিমুখ হয়েছি। যার ফলে আমাদের অভ্যন্তরীণ শান্তি, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ, সংঘাত, লঙ্ঘন, অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে।
রমজানের সিয়াম সাধনা ও আল্লাহর ওলিদের আত্মশুদ্ধির সাধনার সাদৃশ্যতার বর্ননা দিয়ে হাফেজ কেরামত আলী বলেন, পবিত্র মাহে রমজান হলো রহমত নাজাত ও মাগফিরাতের মাস। আল্লাহর ওলীগণও আল্লাহর পক্ষ থেকে পাপি-তাপি, গুনাহগার বান্দার নাজাতের উসিলা। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধিই অর্জন করে। আর আউলিয়ায়ে কেরামের দরবারে মানুষকে আত্মশুদ্ধি অর্জনেরই শিক্ষা দেয়া হয়।
ওরস মাহফিলে হযরত শাহসুফি আব্দুস সোবহান মাইজভাণ্ডারী (রহ.)’র জীবন কর্মের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আধ্যাত্মিকতা সূফীবাদ আমাদের ধর্মীয় গোঁড়ামি মুক্ত সম্প্রীতিপূর্ণ উপায়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পথ দেখায়। তেমনি একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার সূফী ব্যক্তিত্ব ছিলেন হযরত শাহসূফী আব্দুস সোবহান আল মাইজভাণ্ডারী (রহঃ)।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পেকুয়া আহলে বায়তে রাসুল (সঃ) সুন্নীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক বিশিষ্ট সূফী সংগীত শিল্পী এফ এম জাকের হোসাইন, বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মোহাম্মদ সিদ্দিক সওদাগর, আব্দুল গফফার, নূরুল আলম মাইজভাণ্ডারী, আব্দুল মালেক মাইজভান্ডারী (মানিক), শিল্পী নূরে জাহাঙ্গীর, শিল্পী এম মহিউদ্দিন সিজার, শিল্পী রেজাউল করিম, সূর্য মনি, গায়ক শফিউল আলম, মুহাম্মদ শুক্কুর প্রমুখ।
সর্বশেষে মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইতের প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করার পর আজিমুশশান ওরশ মাহফিলের আখেরী আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ ক্বারী মাওলানা মুহাম্মদ কেরামত আলী মাইজভান্ডারী। তিনি ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন, চীন রাখাইন ও কাশ্মীরের নিপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য মহান আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে প্রার্থনা করেন।
Leave a Reply