শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সেন্টমার্টিনে মিয়ানমারের দুই সেনা ও ৩১ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ২ রোহিঙ্গা যুবকের দেহ তল্লাশিতে মিললো অস্ত্র গুলি টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহরে জলাবদ্ধতা, পর্যটকদের দুর্ভোগ কক্সবাজার জেলা পরিষদের ১৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাজেট ঘোষণা কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে নেটওয়ার্ক কোয়ালিটি টেস্ট কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন পলক আরসার জোন ও কিলিংগ্রুপ কমান্ডারসহ আটক ৩ পটিয়ায় যৌতুক নিয়ে তরুণীর আত্মহত্যা, হবু স্বামী গ্রেফতার  মহেশখালী হত্যা মামলার আসামী মাদ্রাসার সভাপতি হতে দৌঁড়ঝাপ চকরিয়ার চিংড়িজোনে বিপুল অস্ত্র ও কার্তুজসহ বাহিনী প্রধান বেলালসহ গ্রেফতার চার কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের জন্য ফ্রান্সের ১.৫ মিলিয়ন ইউরো অনুদানে ইউএনএইচসিআরের কৃতজ্ঞতা

বিচ্ছিন্ন সহিংসতা ॥ এক হাজার ইউপিতে উৎসবমুখর ভোট

মোবারক উদ্দিন নয়ন:
কক্সবাজারসহ সারাদেশে অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই অনুষ্ঠিত হয়েছে তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও ৯ পৌরসভার ভোট। তবে কিছু কেন্দ্রে ভোটপ্রদানে বাধা প্রদান, জাল ভোট ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংস ঘটনাও ঘটেছে। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল আশানুরূপ। পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। আগের দুই ধাপের মতো তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে তেমন সহিংসতা হয়নি। খুলনায় ভোটের আগের রাতে সহিংসতায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ১ জন নিহত হয়েছেন।
সকাল ৮টায় ভোট শুরুর আগে থেকেই প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে যান। দুপুরের দিকে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম হলেও বিকেলের দিকে আবার বাড়ে। অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রের আশপাশে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ ভোট দিতে আসছেন, আবার কেউ ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ দূরে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। এই ছিল দিনভর ভোট কেন্দ্রের আশপাশের দৃশ্য। স্থানীয় সরকারের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নির্বাচন হওয়ায় প্রতিটি গ্রামের পাড়া-মহল্লা থেকে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে বয়স্ক ভোটারদের বিশেষ ব্যবস্থায় কেন্দ্রে এনে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সবাই চান নিজ এলাকায় পছন্দের চেয়ারম্যান-মেম্বার নির্বাচিত করতে। তাই প্রার্থীদের মধ্যে কে কাকে পেছনে ফেলে বিজয়ী হবেন এ নিয়ে শুরু হয় নানা কৌশল। আর এ কৌশল প্রয়োগ করতে গিয়েই পরস্পরবিরোধী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে মাঝেমধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। কে কার চেয়ে বেশি ভোট আদায় করে বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন এ নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা।
রবিবার ১২৩টি উপজেলার ১ হাজার ইউপি ও ৯ পৌরসভার নির্বাচন চলাকালে সহিংসতা এড়াতে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। আগের দুই ধাপের নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হওয়ায় এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়। তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ২০টি রাজনৈতিক দল চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দেয়। স্বতন্ত্রসহ চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ৫ হাজার ২২২ জন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪ হাজার ৪০৯ জন। এর মধ্যে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১ হাজার ১০৫ জন ও সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন করেন ৩৪ হাজার ৬৩২ জন।
এবারের নির্বাচনে ৩৮১ জন বিচারিক হাকিম মাঠে নামানো হয়। বিচারিক হাকিমগণ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মাঠে নিয়োজিত থাকবেন। তারা নির্বাচনী অপরাধসহ বিভিন্ন অপরাধ আমলে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংক্ষিপ্ত বিচারকাজ করছেন। নির্বাচনের আগেই চেয়ারম্যান পদে ১০০ জন, সংরক্ষিত সদস্য ১৩২ জন এবং সাধারণ সদস্য ৩৩৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
কক্সবাজার পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনসহ চকরিয়া ও পেকুয়ায় ১৬টি ইউপি নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে ছিল জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চকরিয়ায় ১০ ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানো চেষ্টার অপরাধে ২১ জনকে আটক করা হলেও পরবর্তীতে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সকালে কক্সবাজার পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচনের দুই কেন্দ্রে পুলিশের উপ-পরিদর্শকের বডিতে ক্যামেরা সেট করা অবস্থায় ডিউটি পালন করতে দেখা যায়। ছোট আকৃতির এই ক্যামেরা দায়িত্বরত দুজন পুলিশ সদস্যের অন্য কম্পলসারি এ্যাক্সেসরিজের মতো ইউনিফর্মের সঙ্গে বিশেষ পদ্ধতিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। ডিউটি শুরুর আগেই নিজেদের পোশাকে বিশেষায়িত ক্যামেরা স্থাপন করেন পুলিশ সদস্যরা। জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, পুলিশে কাজের সচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পুলিশিং কাজের আরও গতিশীলতায় বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার হয়। বডি ওর্ন ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে ঘোরানো যাবে, ওয়াইফাই এবং থ্রিজি, ফোরজি নেটওয়ার্ক ও জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি যে কোন স্থানে বসেই সবকিছু তদারকি করা যাবে। পুলিশের এই ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’ ভ্রাম্যমাণ সিসিটিভি তাৎক্ষণিক কোন ঘটনা চোখ এড়িয়ে গেলেও এই ক্যামেরা সবকিছু রেকর্ড করে রাখে।
বেসরকারিভাবে যারা বিজয়ী হয়েছেন দৈনিক কক্সবাজার ৭১ এর প্রতিনিধিদের তথ্যের ভিত্তিতে নিচে তুলে ধরে হলো:-
কক্সবাজার পৌরসভা: কক্সবাজার পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের উপ নির্বাচনে ডালিম প্রতীকের প্রার্থী এম. এ মনজুর ১৪৯২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পাঞ্জাবি প্রতীকের কাজী শামীম আহমেদ শামীম পেয়েছেন ১২৩৭ ভোট। দু’জনের ভোটের ব্যবধান ২৫৫ ভোট।
রোববার ২৮ নভেম্বর ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এ উপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাবেক কাউন্সিলর কাজী মোরশেদ আহমদ বাবু’র মৃত্যুতে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদটি শূন্য হয়। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন উপ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন।
চকরিয়া: চকরিয়া উপজেলার ১০ ইউপি নির্বাচনে ৫ ইউপিতে নৌকা, ২ টিতে স্বতন্ত্র ও ৩টিতে বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা হলেন, লক্ষ্যারচর ইউনিয়নে খম আওরঙ্গজেব বুলেট (নৌকা), ঢেমুশিয়ায় মঈনুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), পূর্ব বড় ভেওলায় ফারহানা আফরিন মুন্না (নৌকা), পশ্চিম বড় ভেওলাতে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (নৌকা), বদরখালীতে নূরে হোছাইন আরিফ (নৌকা), শাহারবিল ইউনিয়নে নবী হোছাইন চৌধুরী (স্বতন্ত্র), কাকারা ইউনিয়নে মো. শাহাবউদ্দিন (বিদ্রোহী), কোনাখালীতে দিদারুল হক সিকদার (বিদ্রোহী), ভেওলা মানিকচরে জাহাঙ্গীর আলম (স্বতন্ত্র) ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে আফজালুর রহমান চৌধুরী (বিদ্রোহী)।
পেকুয়া: পেকুয়া উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পেকুয়া সদর ইউনিয়নে বাহাদুর শাহ (স্বতন্ত্র), রাজাখালী ইউনিয়নে নজরুল ইসলাম সিকদার (নৌকা), উজানটিয়ায় তোফাজ্জল করিম (বিদ্রোহী), শিলখালী ইউনিয়নে এসএম কামাল হোছাইন (স্বতন্ত্র), মগনামায় মো. ইউনুছ চৌধুরী (স্বতন্ত্র)।
বারবাকিয়া ইউনিয়নে একটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত থাকায় এই ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
অন্যদিকে কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়নের স্থগিত ৭ নং ওয়ার্ডে পূণ: নির্বাচনে প্রশাসনের কাছে ৩ দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আ.ন. ম শহীদ উদ্দিন ছোটন।