বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
মিথ্যে ঘোষণা দিয়ে বিদেশি সিগারেট আমদানির পর খালাস করে সরকারের ১০৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৩ টাকা রাজস্ব আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক পৃথক ১১টি মামলা করেছে দুদক। মামলায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সিএন্ডএফ এজেন্টসহ ১১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত। এর আগে বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর কার্যালয়ে এসব মামলা করা হয়।
নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, কমিশনের নির্দেশক্রমে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
১১ মামলার কাস্টমস সংশ্লিষ্ট আসামিরা হলেন, কাস্টমসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম, শুল্কায়ন গ্রুপের প্রাক্তন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার লিপি, মো. মেহেরাব আলী, সাইফুন্নাহার জনি, কাস্টমসের প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম, এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ এবং উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম। এর মধ্যে কামরুল হক ১০টি এবং মো.সিরাজুল ইসলাম সুলতান আহমদ ও ফিরোজ আহমেদ ১১ মামলারই আসামি।
আমদানিকারক-ব্যবসায়ী আসামিরা হলেন, ঢাকার মিমি লেদার কটেজের গোলাম মোস্তফা, এস কে এস এন্টারপ্রাইজের রাসেদুল ইসলাম কাফি, এইচ এল ট্রেড কর্পোরেশনের মো. আব্দুল হান্নান দেওয়ান, আর কে ইন্টারন্যাশনালের বিথী রানী সাহা, এস এ এম ইন্টারন্যাশনালের মো. সেফায়েত উল্লাহ, এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের নাসরীন রায়হান, এ কিউ ট্রেডিংয়ের আব্দুল কুদ্দুস রায়হান, জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. জাহিদুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের সুপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রবীন্দ্র নাথ সরকার ওরফে রবি, গাজীপুরের খান এন্টারপ্রাইজের মো. রাশেদুল হোসেন খান এবং লক্ষীপুরের এস পি ইন্টারন্যাশনালের মো. সেলিম। এরা প্রত্যেকেই একটি করে মামলার আসামি।
সিএন্ডএফ এজেন্ট সংশ্লিষ্ট আসামিরা হলেন, সিএন্ডএফ এজেন্ট মেসার্স এম অ্যান্ড কে ট্রেডিংয়ের মোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা, চাকলাদার সার্ভিসের মো. হাবীবুর রহমান (অপু) চাকলাদার, এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. মিজানুর রহমান চাকলাদার, লাবনী এন্টারপ্রাইজের মো. রাশেদ খান, মো. রুহুল আমিন, মো. আরিফুর রহমান, স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেডের মো. কামরুল ইসলাম, জাভেদ আহমেদ, তানজিন মোরশেদ. মো. শরীফ উদ্দিন, মো. আব্দুল কাফি, মো. আনিছুর রহমান, মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ইকবাল হোসেন মজুমদার, লায়লা ট্রেডিং কোম্পানির মো. জসিম উদ্দিন।
এদের মধ্যে চাকলাদার ২টি, মো. রাশেদ খান, রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান ৩টি করে মামলার আসামি। বাকীরা সবাই একটি করে মামলার আসামি হয়েছেন।
অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে মো. আব্দুল গোফরান ও মো. জহুরুল ইসলাম ১০টি করে মামলার আসামি। অপর অনুপ্রবেশকারী মো. আবুল কামাল ১টি মামলার আসামি।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত বিভাগের চার কর্মকর্তা পৃথক পৃথক বাদী হয়ে ১১টি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছেন।
এর মধ্যে একটি মামলায় মিথ্যা ঘোষণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য আমদানি ও খালাস পূর্বক সরকারের ৮ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় ৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩২ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এতে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তৃতীয় মামলায় ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাতের মামলায় আসামি করা হয়েছে ৯ জনকে।
এছাড়া দুদক প্রধান কার্যালয়ের মানিলন্ডারিং বিভাগের সহকারী পরিচালক বিলকিস আক্তার বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি মামলায় সরকারেরর ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ১৮৩ টাকা রজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় আসামি করা হয় ৯ জনকে। অন্য মামলায় ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার ১১২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এ মামলাতেও আসামি করা হয় ৯ জনকে।
অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে ৩টি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় ৮ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ৯৭৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৯ জনকে আসামি করা হয়। অন্য মামলায় সরকারের ৮ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৯ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে ৯ জনের বিরুদ্ধে। তৃতীয় মামলায় ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ এর উপ-পরিচালক নারগিস সুলতানা বাদী হয়ে ৩টি মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি মামলায় ৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। দ্বিতীয় মামলায় ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। তৃতীয় মামলায় আসামি করা হয় ১১ জনকে। এ মামলায় ৮ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।