নিজস্ব প্রতিবেদক:
কারাগার আধুনিক সভ্যতায় বন্দিদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। আইন অনুসারে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাকে সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশ কারা বিভাগের। “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশের কারাগারসমূহে আগত বিপথগামী লোকদের সঠিক প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তাদের কৃত ভুল বুঝতে সহায়তা করা ও সংশোধন করা এবং বর্তমান যুগের সথে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কারা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বর্তমানে কক্সবাজারের জাতীয় ঈদগাহ মাঠটি ছিল এক সময়ের কক্সবাজার জেলা কারাগার পরে সেটি স্থানান্তরিত হয়ে কলাতলী বাস টার্মিনাল সড়কের মাঝামাঝি স্থানে ৬৩০ জন বন্দির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ভবন কাঠামোতে দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করে কক্সবাজার জেলা কারাগার।
পরবর্তীতে দুইশো বন্দী ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট একটি ৬ তলা ভবন নির্মাণের পর সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ৮শ ৩০ জনে।
৬ তালা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মাণের পূর্বে কারাগারে বন্দিদের আবাসন ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক।
কারাগারে ধারণ ক্ষমতা ৮৩০ জন হলেও তখন কিছু কিছু সময়ে বন্দিদের সংখ্যা ৫ হাজারের কোটাও ছেড়ে যেতো। এখন একাধিক ভবন থাকায় সেই দিনের নাজুক পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না বন্দীদের। বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৩ হাজার ৫ শ ৭২ জন, তার মধ্যে নারী বন্দি ১৬২ আর এইসব বন্দিদের নিরাপত্তা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য জনবল রয়েছে মাত্র ১৫৪ জন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
তৎকালীন সময়ে কক্সবাজার জেলা কারাগার নির্মাণে ১২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তার মধ্যে প্রায় ৮ একর কারা অভ্যন্তরে বাকি ৪ একর বাহিরে। তবে নিয়মিত এত গুলো বন্দিদের অনুকূলে জমি কম বলে দাবি করেছেন অনেকই একই সাথে কারাগারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন আবাসন স্থাপন করা জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এই সমস্যা নিরসনে আগামীতে কারাগারের মূল অংশ বর্ধিত করার লক্ষ্যে কারাগারের সামনে সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন আরো ৭ একর জমি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পেশ করা হয়েছে বলে জানাগেছে। এর মাঝেও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও কারা প্রশাসন কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন কারা কর্তৃপক্ষ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইতিমধ্যে কারা প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন পরীলক্ষিত হয়েছে তার মধ্যে, প্রতিদিন যে সকল বন্দি জামিন পাচ্ছেন তাদের নামের তালিকা কারাগারে সামনে স্থাপিত ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডে নিয়মিত প্রর্দশন করা হয়,যায় ফলে সেবা প্রার্থীরা বন্দিদের বিষয়ে অবগত হতে পারে।
বর্তমানে বন্দিদের দেখা সাক্ষাৎ গ্রুপ ভিত্তিক করানো হচ্ছে বলে জানান, সদ্য কারাগার থেকে মুক্ত হওয়া টেকনাফের আব্দু রহিম। আবেদন ফরমটিও বিনা মূল্যে লিখে দিচ্ছেন কারা কর্মচারিরা। বন্দিদের খাবার ও চিকিৎসা ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রতিদিন তিনজন চিকিৎসক কারাগারে চিকিৎসা দিতে আসেন, তার মধ্যে রয়েছে একজন নারী চিকিৎসক, বর্তমানে কারাগারে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি খাদ্যের গুণগতমান আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। প্রতিদিন জেল সুপার কর্তৃক খাবারের মান ও পরিমাণ দেখে বন্দীদের মাঝে সরবরাহ দেওয়া হয়।
বন্দিরা যে মানের খাবার পাচ্ছে এতে তারা অত্যন্ত খুশি বলে জানাগেছে। এছাড়া কারা ক্যান্টিন থেকে বন্দিরা নিজ খরচে ন্যায্য মূল্যে খাবার সামগ্রী ক্রয় করতে পারছেন।
ধরণ ক্ষমতার তুলনায় বন্দী বেশি থাকলেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ফলে বর্তমানে বন্দিদের বসবাসের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছেনা।
সম্প্রতি কারা অভ্যন্তরে ১০০ টি নতুন বৈদ্যুতিক পাখা লাগানোর ফলে প্রচন্ড গরমের মধ্যেও তারা অনেকটা স্বস্তিতে আছে বলে অকেই জানিয়েছেন। কারাগারে পানির ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দীদের বিনোদনের জন্য এলইডি টিভিসহ ভলিবল খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দিবস ভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এছাড়া কারাগার কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধিন মোবাইল দিয়ে বন্দিরা তাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন ফলে নিয়ম শৃঙ্খলায় ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া না।
বন্দিদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সামাজিক ও আত্নউন্নয়নে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন স্থানীয় সমাজসেবার মাধ্যমে কয়েদি জাহাঙ্গীর, মীর কাসেম ও রাখাল নামে ৩ জন কয়দিকে মুক্তির পরে তাদের আত্মসামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া লিগ্যাল এইড এর মাধ্যমে গরিব অসহায় বন্দীদেরকে বিভিন্ন আইনি সহায়তা দেওয়া হয়।
এছাড়া কারা পরিদর্শক ও জেলা প্রশাসক কক্সবাজার মাঝে মাঝে কারাগারে এসে বন্দিদের খোঁজ খবর রাখেন।
এ বিষয়ে জেল সুপার মো: শাহ আলম খান বলেন কারাগার আধুনিক সভ্যতায় বন্দিদের সংশোধন ও সুপ্রশিক্ষিত করে সভ্য সমাজের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন কারণে মানুষ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে। আইন অনুসারে শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি তাকে সংশোধন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব বাংলাদেশ কারা বিভাগের। “রাখিব নিরাপদ দেখাব আলোর পথ’’ এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দেশের কারাগারসমূহে আগত বিপথগামী লোকদের সঠিক প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তাদের কৃত ভুল বুঝতে সহায়তা করা ও সংশোধন করা এবং বর্তমান যুগের সথে তাল মিলিয়ে সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে সমাজে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কারা প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
Leave a Reply