৭১ অনলাইন ডেস্ক:
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো অভিযানের সময় ঘরবাড়ি হারিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখা আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। পাঁচ বছর ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার গোলাগুলি ও আগুনে ঘরবাড়ি হারানো রোহিঙ্গারা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশে নতুন করে তাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।
শনিবার সকালে কথা হয় রোহিঙ্গা বৃদ্ধ আবদুল মালেকের (৬০) সঙ্গে। তিনি জানান, ‘পাচঁ বছর ধরে আমরা শূন্যরেখায় (জিরু পয়েন্টে) ছিলাম। ‘আইসিআরসি’ আমাদের সুযোগ-সুবিধা দিতেন সরকারের পক্ষ হয়ে। কিন্তু সমস্যার কারনে আমরা বর্তমানে এখানে (এপারে তুমব্রু বাজারে) বাসা বেঁধে থাকছি। আমাদের আগুন লাগিয়ে দেয়। তখন আমরা মিয়ানমারে ঢুকে যাই। এক রাত থাকার পর আবার বার্মা (মিয়ানমার) থেকে এ দিকে পার করে দেয়, সে দেশের সরকার। এখন আমরা কোথায় যাবো? এখানে থাকার ব্যবস্থা নেই, নেই খাবার, টয়লেটও। এতে নারী-শিশুদের নিয়ে খুব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ’
সরেজমিনে দেখা যায়, শূন্যরেখার কাছাকাছি তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে কয়েক’শ রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে ঠাঁই নিতে ত্রিপল নিয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলেমিশে গাছ-বাঁশ নিয়ে বাসা তৈরি করছিল। আবার অনেকে আশ্রয় নিতে জায়গা খুঁজতে এদিক-ওদিক ছুটছে। এছাড়া বাজারে অন্যদিনের তুলনায় রোহিঙ্গাদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
শূন্যরেখার শিবিরে আগুনে ঘর হারিয়ে পরিবার নিয়ে তুমব্রু বাজারে আশ্রয় খোঁজতে আসা আবু নাসের জানান, ‘শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরে বসবাসকারীদের মধ্যে আমিও ছিলাম। আগুন দিয়ে আমাদের ঘরবাড়িগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা নিরীহ মানুষ, কোন পক্ষের না। সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, গায়ের জামা ছাড়া কিছু বের করতে পারেনি। আমার স্ত্রীও অসুস্থত, পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে একটি জায়গায় খুঁজছি। এর আগের দিন স্থানীয় এক হিন্দু পরিবারের কাছে একদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছিলাম।’
তুমব্রুর বাজারের দোকানদার নির্মল ধর জানান, ‘গত বুধবার থেকে সীমান্তে থেমে গোলগুলি-আগুন খেলা চলছে। শূন্যরেখার অনেক রোহিঙ্গা তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে এখন নতুন করে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। যার কারণে স্কুলের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গোলাগুলি-আগুনের ঘটনায় যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ঢুকেছিল, তারাও এপারে আশ্রয় খোঁজছে।’
জানতে চাইলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ তার আশপাশে কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে শুনেছি। রোহিঙ্গারা যাতে করে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য একাধিক আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তবে কতজন রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে। সীমান্তের সবাই সর্তক অবস্থানে রয়েছে, পরিস্থিতি শান্ত আছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে নতুন করে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার অংশে সে দেশের সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষ চলে। ওই সংঘর্ষে মিয়ানমার অংশ থেকে মর্টার শেল তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়ে। সেসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কয়েক দফা প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ। সীমান্তের এপারে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টারশেল পড়ায় মিয়ানমারের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। তারা জানায়, ভুলবশত মর্টারশেল বাংলাদেশ ভূখণ্ডে এসে পড়েছিল।
সুত্র: সমকাল
Leave a Reply